শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লিডিংয়ের গ্রান্ডে আলোচনায় বসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে মোহাইমিনুল রাজ বলেন, ‘মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় আমাদের সব দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে আমরা আমাদের আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করে নিলাম এবং দাবি পূরণের অপেক্ষায় থাকলাম।’
মোহাইমিনুল রাজ বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন ভিসির বিরুদ্ধে করা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) কাছে উপস্থাপন করবেন। আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তাই আমরা আশা করছি, আচার্য মহোদয় আমাদের শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের কথা বিবেচনায় রাখবেন।’
এর আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জের ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে হামলার ২৭ দিন পর শনিবার দুপুরে দুঃখ প্রকাশ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
গতকাল শুক্রবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক, তারা পর্যায়ক্রমে সেগুলো পূরণ করবেন। কিছু দাবি ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। আর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির ব্যাপারে আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে আলোচনা করবেন।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের ছাত্রীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরদিন বিকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কিলোতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন।
গত ২৬ জানুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনশনরত ২৮ জন শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙান। এরপর থেকে অহিংস আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ ও অনশন কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চালিয়ে আসছিলেন তারা। ১৪ দিন পর বুধবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এর দুই দিন পর শুক্রবার সংকট নিরসনে সিলেট ছুটে যান শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার পরামর্শ দেন। পরদিন উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা এলো।